মরহুম আমীর আলী খান বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি একজন মানবদরদি এবং
সমাজকর্মী হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি বরিশাল জেলার বিভিন্ন
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন
করেছেন।
তিনি একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসাবে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনায় উৎসাহ
প্রদান করতেন এবং দরিদ্র-মেধাবি ও অসহায় পরিবাবের ছেলে-মেয়েদেরকে
পড়াশুনার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করতেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় অনেকেই
আজ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েছেন । এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন । তিনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষানুরাগীই
ছিলেন না, তিনি একজন মানবতার প্রতীক হিসাবে বরিশাল জেলায় বিভিন্ন ধরনের
জনহিতকর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন ।
তিনি মানুষকে ধর্মের মূল আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সত্যিকার
ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসাবে সমাজে অবদান রাখার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন ।
তিনি বটতলা মসজিদসহ বরিশাল জেলার বিভিন্ন মসজিদ কমিটিতে দায়িত্ব পালন
করেছেন। এই মহান শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী ও ধর্মভীরু ব্যক্তি তাঁর আদর্শ
দিয়ে সমাজের কুসংস্কার,অন্ধত্ব ও নেতিবাচক দিকগুলো পরিবর্তনের জন্য
আমরণ নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন । তাঁর আদর্শের প্রতি বরিশালবাসী
শ্রদ্ধাবনত। তাঁর আদর্শকে উজ্জীবিত রেখে মানুষকে সত্যিকারের মানুষ
হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমীর আলী খান এর নামে এই
লাইব্রেরিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে ।
মরহুম আমীর আলী খান ৭ ফেব্রুয়ারি,১৯৭৯ বরিশাল জেলায় ইন্তেকাল করেন ।
গত ২০১৭ সালে বরিশাল জেলার ১নম্বর আমীর কুটির এলাকায় আমীর আলী খান
স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরি গঠিত হয়। এ লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় বরিশালের
একজন সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি মরহুম আমীর আলী খান এর স্মরণে।
তাঁর আদর্শ ও কর্মজীবন অনুসরণ করে এক আলোকিত সমাজ তৈরি করাই এ লাইব্রেরির
মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে লাইব্রেরির
বিভিন্ন কমিটি। লাইব্রেরির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত নির্বাহী
কমিটি এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা অর্জন ও সাধারণ পাঠকদের
পাঠাভ্যাসতৈরিতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ফলে লাইব্রেরিটি
এলাকায় দ্রুত পরিচিতি লাভ করেছে। উল্লেখ্য, আমীর আলী খান স্মৃতি পাবলিক
লাইব্রেরি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত (০৮৭) একটি
প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান
বই এ লাইব্রেরিকে দিন দিন আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের
আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নয়ন সম্ভব।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতের নাম তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ইন্টারনেট সংযোগ
স্থাপনের মাধ্যমে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার ব্যবহার করে বিশ্বের
তথ্য ভান্ডারের সাথে যুক্ত হয়ে জ্ঞান অন্বেষণে ডিজিটাল লাইব্রেরি চাহিদা
বর্তমান প্রজন্মের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। তরুণ ছাত্র-ছাত্রীর
স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমীর আলী খান স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরি
ডিজিটাল লাইব্রেরিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আর্থিক সহায়তায় ডিজিটাল লাইব্রেরির
একটি ওয়েবসাইট প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে আমীর আলী খান ডিজিটাল
পাবলিক লাইব্রেরির মাধ্যমে পাঠকদের একাধিক পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর
মধ্যে অন্যতম হলো ই-বুক পড়া এবং বিভিন্ন অডিও ও ভিডিও প্রদর্শণের
মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ও পাঠকদের ডিজিটাল পন্থায় জ্ঞান অর্জন এবং
পাঠাভ্যাস তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করা। ইতিমধ্যে এই ওয়েবসাইটের কাজ
দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পাঠকদের জন্য ই-বুক
হিসেবে পড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচেছ।
আশা করা যায়, অচিরেই এ ডিজিটাল লাইব্রেরি বরিশালে একটি শক্তিশালী
প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফলতা লাভ
করবে।
শিক্ষা অর্জন ও পাঠাভ্যাসগড়ে তোলার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করা ।
সর্বপ্রথম মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই যিনি আমীর আলী খান স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরিটি ডিজিটাল লাইব্রেরি করার তৌফিক প্রদান করেছেন। মরহুম আমীর আলী খান ছিলেন একজন সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী এবং দানশীল ব্যক্তি। তিনি অসহায় ও দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। জনহিতকর ও সমাজ সেবায় তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত আমীর আলি খান স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরিটি ডিজিটাল করার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে জ্ঞান অন্বেষণের সুযোগ এসেছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এদেশের সকল মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি। মরহুম আমীর আলী খানের আদর্শ সকলের মাঝে জাগ্রত রাখতে এ ডিজিটাল লাইব্রেরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জ্ঞান অন্বেষণের এবং শিক্ষা বিস্তারে আমীর আলী খান স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরির সেবা গ্রহণ করুন। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলায় আপনাদের অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ভবিষ্যতে এ লাইব্রেরির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এই বিভাগে শিক্ষা, ধর্ম, ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ভ্রমণ-িকাহিনি, বিখ্যাত বইয়ের অনুবাদ, নারী বিষয়ক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুর্লভ ও বহুমুখী বইয়ের সমাহার রয়েছে। শিশু বিভাগে রয়েছে বিভিন্ন মজার মজার গল্প ও ছবির বই। শিক্ষামূলক ও জীবন গঠনের আদর্শ বিষয়ক বই ছাড়াও ছোটদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বই থাকবে এ বিভাগে। অচিরেই ছোট শিশুদের খেলনাসহ অত্যাধুনিক শিশু কর্ণার স্থাপন করে ছোটবেলা থেকে খেলতে খেলতে বই পড়ার অভ্যাস গঠনের আনন্দঘন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। শিশুর মায়েদের জন্য থাকবে শিশুদের সঙ্গ দেবার উপযুক্ত পরিবেশ।
ই-বুক এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক বই। ডিজিটাল বই হিসেবেও এর নামকরণ করা যেতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ই-বুক পড়া যায়। ই-বুক হলো বইয়ের ইলেকট্রনিক সংস্করণ। ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে কম্পিউটার, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অতি সহজে, কম সময়ে ও যেকোনো স্থানে বসেই ই-বুক পরিষেবা নেওয়া যায়। চিত্র, পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তথ্যাদি উপস্থাপন কিংবা রংয়ের ব্যবহার করা হয়েছে- এমন চিত্রিত বই ই-বুকে রূপান্তরিত করা হলে তা পাঠকের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং বই পড়ায় নতুনত্ব আনে। ফলে ই-বুক পাঠককে জ্ঞান লাভে বেশি আগ্রহী করে তোলে। তাই একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ডিজিটাল লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই। ডিজিটাল লাইব্রেরি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে আধুনিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। সুস্থ বিনোদনের জন্যও ডিজিটাল লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
ই-ম্যাগাজিন বা ইলেকট্রনিক ম্যাগাজিন হল ম্যাগাজিনের ডিজিটাল সংস্করণ। অনলাইনে পড়া যায় বলে একে অনলাইন ম্যাগাজিনও বলা হয়। আমীর আলী খান স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরির সদস্যদের জন্য তাদের পছন্দের ও আকর্ষণীয় বিষয়ের ই-ম্যাগাজিন পড়ার ব্যবস্থা আছে।
অডিও বলতে শব্দের রেকর্ড করা সংস্করণকেই বোঝায়। এই সাইটের সমস্ত অডিওগুলোই অডিও-বুক ফরম্যাটে থাকবে। একটি অডিও-বুক হল একটি বইয়ের শব্দ রেকর্ডিং। স্পষ্টতই, পাঠকরা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে এই সুবিধাটি ব্যবহার করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় পাঠকরা শ্রোতা হয়ে উঠবে। এটি শুধুমাত্র একটি বই মূল থেকে বোঝার ব্যাপারেই নয় বরং শেখার প্রক্রিয়াকেও ছোট করতেও ভূমিকা পালন করবে। ফলে পাঠের সময়ও কমে আসবে। তদুপরি, শ্রোতারা উৎসাহ, স্বাচ্ছন্দ্য ও আনন্দ নিয়ে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে।
ভিডিও হল চলমান ভিজ্যুয়াল ইমেজের রেকর্ডিং বা সম্প্রচার। এই সাইটে যে ভিডিওগুলো আপলোড করা হয়েছে বা আপলোড করা হবে তার প্রধান উদ্দেশ্য হল দর্শকদের আলোকিত করা, তাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তারা যে জিনিসগুলি শিখেছে তা আরও ভালভাবে বুঝে উঠতে পারবে। নিঃসন্দেহে, এটি জ্ঞান সংগ্রহের এবং এই বিশ্বকে সহজ এবং কার্যকর উপায়ে বোঝার একটি দুর্দান্ত উৎস।
আমীর আলী খান স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরির প্রত্যেক সদস্যসহ এর সকল
সম্মানিত পাঠক ও স্টেকহোল্ডারদের লাইব্রেরির সকল সেবা উপভোগ করার
পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য। শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি,
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় অগ্রসরমান বরিশাল বিভাগে এটিই প্রথম
ডিজিটাল লাইব্রেরি। সুতরাং, লাইব্রেরি কমিটির সদস্যসহ এর সাথে সম্পৃক্ত
ব্যক্তিবর্গের প্রশিক্ষণ প্রদান অপরিহার্য। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
পাঠকদের মানসম্মত পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পৃক্ত সকলের জন্য
নিম্নলিখিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা রহণ করা হয়েছে:
১. ডিজিটাল লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা;
২. মৌলিক কম্পিউটার জ্ঞান;
৩. যোগাযোগ ও (Communication Skills) প্রচার দক্ষতা;
৪. লাইব্রেরির সকল সেবা হালনাগাদসহ এর মেইনটেনেন্স, নিরাপত্তা ও
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ;